বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়েহলুদ, আশীর্বাদ, ধান-দূর্বা, ভোজনসহ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুরু হলো উলুধ্বনি আর আশীর্বাদ। ওদিকে চলছে অতিথি আপ্যায়ন। সিঁদুর দান ও পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে সাতপাক ঘুরছে বর-কনে। তবে বর-কনের জায়গায় ছিল দুটি ব্যাঙ।
গতকাল শুক্রবার (১৫ জুলাই) রাত ১০টার দিকে দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী চত্বরের হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরে সনাতন ধর্মের নিয়মে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সনাতন ধর্মের শাস্ত্রমতে সব বিধি মেনে মহা ধুমধাম করে দুই ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করা হয়।
শুধু তাই নয়, বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন পাঁচ শতাধিক অতিথি। সেখানে নেচে-গেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান উদযাপন করেন তারা। বিয়েতে নিমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও ব্যাঙ দম্পতিকে দিয়েছেন অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের উপহারসামগ্রী।
দিনাজপুরের প্রধান ফসল ধান। শুক্রবার ছিল আষাঢ় মাসের শেষ দিন। অথচ ভরা বর্ষা মৌসুমেও নেই বৃষ্টির দেখা। তাই খরার কবলে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে আমনের আবাদ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টির অভাবে বর্ষাকালেও ডাঙ্গা ও কিছু আবাদি জমি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে বছর তাদের এলাকা অনাবৃষ্টির কবলে পড়ে, সেই বছরই তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের এই ধরনের বিয়ের আয়োজন করেন। স্থানীয়ভাবে এটিকে ‘ব্যাঙা-ব্যাঙির বিয়ে’ বলা হয়।
১০১ টাকা প্রতীকী পণে বিয়ে পড়ান পুরোহিত নারায়ণ চন্দ্র। বর ভানু সরকারকে নিয়ে বরের মা সুমনা সরকার ও কনে মতিকে নিয়ে কনের মা আল্পনা মহন্ত হাজির হন। বিয়ের বাজনা, সাদনা তলায় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, সাতপাকে বাঁধা, মালাবদল, সিঁদুরদান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ব্যাঙের বিয়ে।
১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বংশপরম্পরায় তারা এই রীতি পালন করে আসছেন বলে দাবি করেছেন। তাদের বিশ্বাস, ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন